হাজী বাড়ির সমবায় মৎস্য খামার – এক সম্ভাবনার নাম
বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আমিষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩ সালে একদল উদ্যমী তরুণ উদ্যোক্তা ‘হাজী বাড়ির সমবায় মৎস্য খামার’-এর সূচনা করেন। খামারটি গড়ে উঠেছে মেঘনা নদীর একটি প্রাকৃতিক মৃত শাখা বা “কোল” ঘিরে, যা শুধুমাত্র বর্ষার ভরা মৌসুমে মূল নদীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
জলাকার বৈশিষ্ট্য:
- মোট আয়তন: প্রায় ২১০০ শতক বা ৭০ বিঘা
- বর্ষায় গড় পানি গভীরতা: ৮ থেকে ১৩ ফুট (প্রায় ২.৫–৫ মিটার)
- শুষ্ক মৌসুমে পানি গভীরতা: ৫ থেকে ৮ ফুট
প্রাকৃতিক সুরক্ষা ও অবকাঠামো:
উত্তরে: রয়েছে স্থানীয় বসতবাড়ি ও খামারের স্টিলের ছাউনি ঘর, যা পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত হয়।
পশ্চিমে: ১৯৯৪ সালে নির্মিত ৫০ ফুট প্রশস্ত চংপাড়া বেড়িবাঁধ, যা মেঘনা নদী থেকে খামারটিকে আলাদা করেছে। এই বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে ১৪ ফুট প্রশস্ত পাকা রাস্তা রয়েছে, যা যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পূর্বে: রয়েছে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী, যা বিভাজনকারী জাল ও বালির বস্তার বাঁধ দিয়ে গঠিত – এটি বর্ষার সময় খামারের মাছ ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
দক্ষিণ পাশে: হাজীবাড়ির পারিবারিক গোরস্থান এবং আধুনিক কুটুমবাড়ি রিসোর্ট। ঈদ ও ফিশিং টুর্নামেন্টের দিনগুলোতে রিসোর্টে শিকারীদের জন্য উন্নতমানের খাবার রান্নার ব্যবস্থা করা হয়।
২০২৩ সালে হাজী বাড়ি সমবায় মৎস্য খামারে কার্প জাতীয় ১২টি প্রজাতির প্রায় ২ লক্ষ পোনা অবমুক্ত করা হয়। বর্তমানে এসব মাছের সম্মিলিত আনুমানিক ওজন ৭০ থেকে ৮০ টনের মধ্যে। উল্লিখিত কার্প প্রজাতির মধ্যে রয়েছে –
- ব্রিগেড: গড় ওজন ৪.৫–৬ কেজি এবং কিছু মাছের ওজন ৮–১৬ কেজি পর্যন্ত।
- রুই: ৮০০ গ্রাম থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত এবং কিছু ৮–১২ কেজি ওজনেরও পাওয়া যাচ্ছে।
- মৃগেল: সাধারণত ১–৪ কেজি পর্যন্ত।
- কাতল: ৪.৫–৬ কেজি এবং ৮–১৬ কেজি প্লাস।
- কালিবাউশ: ২.৫–৪ কেজি প্লাস।
- ব্ল্যাক কার্প: ১.৫–৪ কেজি পর্যন্ত।
- গ্রাস কার্প: ৬–৯ কেজি বা তদূর্ধ্ব।
- থাই সরপুঁটি: ১–২.৫ কেজি পর্যন্ত।
- পাঙ্গাস: ১.৫–৫ কেজি প্লাস।
- সিলভার কার্প: ৩–৬ কেজি এবং কিছু ৮–১২ কেজি প্লাস।
- মিনার কার্প ও কমন কার্প: ২.৫–৫ কেজি প্লাস।
এছাড়া দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছও খামারে প্রচুর পরিমাণে আহরণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য দেশীয় মাছের মধ্যে রয়েছে –
শোল: ২–৪ কেজি
গজার: ৪–৮ কেজি
বোয়াল: ৫–১২ কেজি
চিতল: ৩–১২ কেজি
বর্তমানে খামারটির প্রায় ৮০ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন, যারা শুধুমাত্র মৎস্য খামার পরিচালনায় সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, দুঃস্থদের সহায়তা প্রদান এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২৫ সালে হাজী বাড়ির সমবায় মৎস্য খামার এবং গো ফিশিং প্রো প্রাকৃতিক, মনোরম ও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করে মৎস্য শিকারীদের জন্য এক ভিন্নধর্মী আনন্দময় অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে। মৎস্য শিকারের মাধ্যমে বিনোদন প্রদান এবং হাজী বাড়ির সমবায় মৎস্য খামারকে দেশের এক নম্বর আদর্শ ফিশিং জোন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
পুকুরটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আগত শিকারীদের মন কেড়ে নেয়। এ কারণেই মাছ ধরার আদর্শ স্থান হিসেবে ‘হাজীবাড়ি সমবায় মৎস্য খামার’ ভবিষ্যতে পরিণত হতে চলেছে সকলের পছন্দের ফিশিং জোনে।